সুস্নাত চৌধুরী
নিশিডাকেরও বাড়া হিসিডাক। ডাক এলে, জিপার-সর্বস্ব পুং, আপনি যেকোনও ওয়ালেই পোস্ট করতে পারেন। তবে, দেওয়ালে মা দুগ্গা আর বাবা লোকনাথের টাইল দেখলে ব্যক্তিগত পোস্টাপিস খুলে আপনাকে পৌঁছে যেতে হবে ডাকঘরে। তোমার ডাকে সাড়া দিতেই, বহে গেছে...! আপনি কেগেল এক্সারসাইজের বিস্ময় বালক, উসেইনতর গতিতে পৌঁছে যাবেন ওই দূরে --- কংক্রিটের আধখাওয়া অকর্পোরেট কিউবিকলে। বলে লাভ নেই, ইটের ধাপে আপনি পা রাখতে পারবেন না; কেননা আপনার আগের জন রাখেননি। কারণ, তার আগের জনও রাখেননি। তার আগের জনও...। বিনে পয়সার পৌনপুনিকতা কাটাতে চাইলে আপনি খুঁজবেন এ এলাকায় দুর্লভ একটি সুলভ। কমপ্লেক্স তো বটেই ব্যাপারটা। তার ওপর গ্যাঁটগচ্চা আছে। খুচরোর আকালে পার্সে কয়েন না থাকলে রবিঠাকুর কয়েনই শেষ পারানির কড়ি। ‘দ্বারী মোদের চেনে না যে, বাধা দেয় পথের মাঝে, বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি, লও ভিতরে ডেকে ডেকে’। মুক্ত। ধারা।
আপনিও চেনেন না বিন্দেশ্বর পাঠককে। পদ্মভূষণ, ১৯৯১। একটাকায় মুক্তির কারিগর। আপনার ওয়াটার-লু যুদ্ধের বিরুদ্ধেই তাঁর ‘সুলভ আন্দোলন’। সেই ১৯৭০-এ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন সুলভ ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সার্ভিস অর্গানাইজেশন। আপনি জানেন না তিনি ডবল এমএ। পিএইচডি, ১৯৮৫, পটনা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বেচারার বিদ্যালয় হয়তো ছিল আপনারই মতো। ফার্স্ট আর ফিফ্থ পিরিয়ডে মিস বললে তবেই, গুটিগুটি বাথরুম যাওয়া। নইলে চেপে বসে থাকো। সেই আপনার পাবলিক টয়লেটে হাতেমাটির হাতেখড়ি। আপনার মতো এহেন চাপের ব্যাকগ্রাউন্ডই হয়তো বিন্দেশ্বরকে আন্দোলনের পথে ঠেলেছিল। কিন্তু, আপনি? বান্ধবীদের ড্রেস না তলপেটের যাতনা, কী থেকে জন্ম নিল আপনারও বিপ্লবী চেতনা? জন হেনরির হাতুড়ির মতো প্রতিবাদের ভাষায় হিজিবিজি আঁকলেন আর লিখলেন। গ্রাফিতি। ১৯৬৬-তে বার্কলের অ্যালান দুন্দে যাকে ডাকলেন ‘ল্যাট্রিনালিয়া’ বলে। রেস্টরুমের আঁকিবুকি। দিন যত গড়াল, মাইনাস করার দেওয়ালে এঁকে চললেন একের পর এক ‘প্লাস’। নিজের নামের সঙ্গে জুড়তে থাকলেন সেই সব ডাকসাইটে সুন্দরীর নাম, যাঁদের বাসস্টপে তিনমিনিট, কিন্তু স্বপ্নে সারারাত দেখেছেন। আপনার যৌন একাকিত্ব ‘অমুক + তমুক’-এর নিরামিশ গ্রাফিতিতে মেশাল আমিশ মশলা। কথায়-ছবিতে সেই দেওয়াল পত্রিকায় উঠে এল স্মার্ট যৌনতার কথা। সুনির্বাচিত স্ল্যাং। কাঁচা হুমকি। আপনার চোখে তখন অবদমিত কামনার চশমা। ভেবে দেখার প্রশ্নই ওঠে না, কোন পাঠিকা বা পাঠকের জন্য এই অমর সৃষ্টি। শুধু নিজেকে একটু আড়ালে রেখে, আর-পাঁচজনের সামনে স্বরচিত রূপকথার মোরাল শোনাতে চাইছিলেন। মাঝখান থেকে সারা পৃথিবীর তাবৎ ইন্টেলেকচুয়াল সমাজবিজ্ঞানীরা হেদিয়ে পড়লেন দেওয়ালের কানে-কানে বলা সেইসব কথা আর ছবি নিয়ে। ব্যাপারটা এতদূরই এগোল আবিশ্ব, গাল পেড়ে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ২০০৫-এ নাকি তাদের একটি ওপিনিয়ন কলামের নামই দিয়ে দিল How to Earn Your Pee h.D!
এত ফুটেজ খাওয়া সেই আপনিও মোক্ষম আনইজি ফিল করলেন যখন চরকসুশ্রুতধন্বন্তরীবিধানরায়তর প্রতিশ্রুতি নিয়ে হাজির হলেন স্বয়ং ডঃ ডি কে লোধ। টাইফয়েড-ভাইরাল-ম্যালেরিয়া-জন্ডিসে অভ্যস্ত, বড়জোর ডেঙ্গি বা চিকুনগুনিয়ার নাম শুনেছেন। এডস-ও সই। তাবলে, বিচিত্র সব উপসর্গে অতিবিচিত্র আধা-তত্সম আধা-বিদেশি রোগের বিজ্ঞাপন! স্যরি, রোগ-উপশমেরই বিজ্ঞাপন। এসব আপনাকে তো লাজুক করে তুলবেই। তাই ইস্কুলের মতো কাটাকুটি কিংবা মেনপয়েন্ট-মেনপয়েন্ট খেলার প্রশ্নই ওঠে না। বরং আপনাকে না ‘প্যারুরেসিস’ রোগ খেয়ে ফেলে, সেদিকে লক্ষ রাখলেন আপনি। এ এক বিশেষ কিসিমের স্ফিংটেরিক ফোবিয়া। আর কেউ থাকলেই আটকে যাওয়া। হেব্বি পাচ্ছে, কিন্তু কিছুতেই বেরোচ্ছে না। ভাগ্যিস, এহেন প্রকাশ্য গোপনরোগের টোটকা আপনি জেনে গিয়েছিলেন! ওইখানে দাঁড়িয়ে কোনও কথা বা চোখাচোখি নয়; পারলে দু-পাশে ফাঁকা খোপ রেখে জায়গা নির্বাচন; অহেতুক দেরি নয়; কোনও ইমোশন-টিমোশন তো একেবারেই নয়। আর যদি স্মুথলি সব কিছু চলে, সেই ঝরনাতলার নির্জনে, সার্কাসের বেঁটে জোকারের মতো পিছু ফিরে নীচু হয়ে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতেই পারেন --- একটি বুটের টোয়ের আগায় একটি শিশিরবিন্দু।
একটাকা + একটাকা = দু’টাকা
এখানে আর বসা-দাঁড়ানো লিঙ্গ বৈষম্য নেই। নারী-পুরুষ সমান-সমান। বিল গেটসও বসেই ডাউনলোড করেন। তবে, সারকথা বুঝিয়েছিলেন গোপাল ভাঁড়। ছোট কাজ না হলে বড় কাজ হয় না। তাই পার কাজ একটাকা করে মোট দু’টাকা, চলতি রেট। অবশ্য ‘ছোট বাইরে’-র নামে ঢুকে, আপনি চলে যেতেই পারেন ‘বড়’ ভেতরে! কেউ টের না পেলেই হল। খুচরো বাঁচানোর আরও পদ্ধতি আছে। ধরুন, আপনি ধর্মতলায়। ডাক এসেছে। সুলভের দিকে হাঁটবেন, নাকি স্মার্টলি সাহেব-সুবোর মতো গটগট বেগে এন্ট্রি নেবেন ওবেরয়দের গ্র্যান্ডাকঘরে? আকাচা শার্টেও আপনি এদিক-সেদিক তাকান, ঢুকে যান ওয়াশরুমে। দারোয়ান সেলাম ঠুকবে। কিংবা, বাংলায় ফিরে এসো, বাবা। আপনি নন্দন চত্বরে, খুচরো অটুট রেখে ঢুকে পড়ুন বাংলা আকাদেমির একতলায়। ঢুকে, এখনও, এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও, একটু বামপন্থী হয়ে দু-পা এগোলেই, মুক্তির সন্ধান। আপনি পাঠক না-হন, ও-চত্বরে ঘোরাঘুরি যখন, লেখক-কবি-সম্পাদক কিছু তো একটা হবেনই। অতএব, বাংলা ভাষায় করা আপনার অধিকার।
যদি ভাবেন নগদে পে করে ঢুকলেও অধিকার জন্মায়, ভুল ভাবছেন। ছুটন্ত আপনি অগ্রিম দু’টাকা দিয়ে পড়িমড়ি ঢুকেছেন। গুডলাক, কোথাও কিছু ভাসছে না। নড়বড়ে ছিটকিনিটা যদিও টালিগঞ্জের সেটের মতো, ধাক্কা দিলেই যাতে খুলে যায়, সেভাবেই বানানো। তবু তাকে ম্যানেজ করে, ইজ্জত বাঁচিয়ে আপনি জাস্ট বসেছেন, একটা শান্তি আপনাকে ঘিরে ধরবে-ধরবে করছে... আআআ! সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া। ‘দাদা, আর কতক্ষণ?’ বাইরে গোটা কলকাতার একসঙ্গে পেয়েছে। দ্বার খোল, দ্বার খোল। অথবা, শৌচাগারের পাংচুয়াল কেয়ারটেকার আপনাকে জানান দিচ্ছেন, দু’টাকায় কেনা টাইম খতম। আপনি ইসবগুল নাকি সিঙ্গাপুরি, এই কোষ্ঠকঠিন পৃথিবীর তাতে থোড়াই কেয়ার। সে বিশ্বাসই করবে না, পাবলিক টয়লেট আসলে বিয়ের মতো। যারা এই বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের বাইরে আছে, তারা চায় যেন-তেন ভেতরে ঢুকতে। সে বুঝবেই না, যারা ভেতরে আছে, তারাও মরিয়া বাইরে বেরোতে। যেন আপনি জয়রাম রমেশের দলে, শৌচাগারকেই মন্দির ভেবেছেন। উল্টে সে সতর্কীকরণ লিখে রাখবে দেওয়ালে --- নো লাউড ফিলোজফিকাল থিঙ্কিং।
তিনটাকা
চানঘর। বারাণসী-গঙ্গাসাগরের মতো স্নানের স্থানমাহাত্ম ও স্থানের স্নানমাহাত্ম এখানে নেই। এই বাথপার্টি প্রলেতারিয়েতদের। তুরস্কের কেতাদুরস্ত ‘হামাম’ বা রাশিয়ার গণস্নানঘর ‘বান্যা’-র মতো কিছু এক্সপেক্ট করা একেবারেই ভুল হবে। আপনার সুড়সুড়ি থাকলে, তা-ও এখানে মিটবে না। দিওনসুসের মন্দিরে নারী-পুরুষের নগ্নস্নান কিংবা ক্যালিগুলা-বাত্স্যায়নের দৃশ্যকল্পে গা-ভাসালেও, গা ভিজবে না। আপনার পিপিং টম দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে ‘পানি মে খুদকো সমেটে হু’ গাইতে থাকা স্যাঁতস্যাতে মন্দাকিনিকে খুঁজে পাবে না। সত্যম শিবম সুন্দরম-এর ভেজা জিনাত আমান গ্রিলের ওপাশ থেকে হাস্কি গলায় বলবে না ‘মোরি চুনারিয়া লিপটি যায়ে’। কোনও হেমেন মজুমদারও তাঁর জল-রঙা ক্যানভাস এগিয়ে দেবেন না। তবু, শহরের ধুলো-ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত আপনি, শরীর আনচান করলে এখানে চান করতেই পারেন।
অনুভব করিনি, তবু বলছি
হি, শি --- ঈশ্বরের বানানো দুই রকমের জন্য দুই রকমেরই ব্যবস্থা। তবু প্রকৃতির ডাকঘরের ‘স্যানিটেশন’ পুরুষদের নয়, ছুটি না-পাওয়া মহিলাদের জন্য। একটাকা দু’টাকা তিনটাকায় সেই ডাকমাশুলের হিসেব হয় না। অনুভব করিনি, অনুমান করেছি, তাই বলছি। অনুরোধও করছি, আপনাকে কিন্তু কেউ বলেনি, ‘রক্ত দাও, স্বাধীনতা দেব’ --- তাই আপনি ফ্রি থাকতে চান থাকুন, ফ্রিডম উপভোগ করুন; কিন্তু যেখানে-সেখানে ফেলে-ছড়িয়ে আসবেন না, প্লিজ।
বেগতিক = বেগ + গতি
গতি যখন আছেই, তখন আর ‘বেগ’ মানে স্পিড নয়, ট্রাবল। হ্যাঁ, সেইসব পাবলিক টয়লেটের কথা বলছি, যখন আপনি গতিশীল, আর অনেকক্ষণ ধরে বেগ পেয়ে, এবার বেগতিক বুঝছেন। তারপর যেতে যেতে যেতে... এবং এতক্ষণ দূরপাল্লার বাসে খেতে খেতে খেতে... না, এমতাবস্থায় নদীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আপনার নেই, নদীর পাড়ে কাজ সারার প্রশ্নও নেই। বরং আপনার গন্তব্য বহরমপুর হলে কৃষ্ণনগর, দিঘা হলে মেচেদা --- এতটা পথ পেরোলে তবে হল্ট বলা যাবে। বাস থামলেই গুঁতিয়ে নামুন, পড়িমড়ি ছুটুন। কৃষ্ণনগরে সরপুরিয়া কিংবা মেচেদায় সিঙাড়ার অর্ডার দিন, সঙ্গে বিনি পয়সায় হালকা হয়ে আসুন। ব্যবস্থা এমনই, আপলোড করলে, ডাউনলোড ফ্রি।
ব্যাপারটা ট্রেনে হলে অবশ্য অন্যরকম। লোকাল ট্রেনে জার্নি যদি লম্বাতর হয়, আপনার হাতে জাস্ট কোনও অপশন নেই। সরপুরিয়াও নেই, সিঙাড়াও নেই। প্যাকেটে বাদাম বা খোসাছাড়ানো ডিমসেদ্ধর দিকেও আপনি আর লোলুপ নজরটি ফেলতে পারবেন না। কাপড়ে-চোপড়ে হওয়া থেকে বাঁচতে কোনও মতে চুপচাপ বসে, ঠায় রবীন্দ্রসঙ্গীত ভাবতে-ভাবতে স্টেশন গুনতে লাগবেন ডিসেন্ডিং অর্ডারে। অডারে আপনার রুমাল-সর্বস্ব গোটা কম্পার্টমেন্টের কী হাল, সেদিকে না হয় ভুলেও তাকাবেন না। এ যেন জীবনের দীর্ঘতম যাত্রা। গন্তব্য এলে, তারপর, সে এক অনির্বচনীয় অনুভূতি (কার্টসি : গোপাল ভাঁড়)! অবশ্য দূরপাল্লার ট্রেনে আপনার জন্য টোটাল অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে। ঝক্কাস! দরজায় ঘটাং-ঘট লক, চিকনাই স্টিলের কমোড (নীচে ফুটো), ঝরঝরে ফ্ল্যাশ, গুটখা-ওলা বেসিন। এখন প্রশ্ন হল একটাই, দুললে কি আপনার হয়?
কিংবা, মোশন বাড়লে কি আপনার মোশন লুজ হয়ে আসে? তাহলেও চিত্তির। বিমানে উঠলে করবেন কী! ঘনঘন যাওয়া তো বিসদৃশ ঠেকবে। আরে বাবা, মার্কিন মুলুকেই মাঝারি দরের বিমানে পঞ্চাশ জন প্রতি একটি করে ল্যাভাট্রি থাকে। লম্বা পথে অত ইয়ে ওরা ফেলবেই বা কোন চুলোয়? ট্রেনের মতো সে তো আর বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া চলে না! অবশ্য চলত এক কালে। তিরিশের দশকে বিলিতি সুপারমেরিন স্ট্র্যানরের বায়ুযানটিতে ছিল এমনই এক মুক্ত শৌচাগার। উড়তে-উড়তে তার ঢাকনাটি যখন খুলে দেওয়া হত, জন্মদিনের বেলুন ফেটে চকচকে কাগজের মতো নীচে সব ছড়িয়ে পড়ত, বাতাসের ধাক্কায় শোনা যেত একরকম শিসের আওয়াজ। সেই থেকে যানটির বদনামই হয়ে যায় --- ‘হুইসলিং শিটহাউস’। কিংবা জলপথও আপনার কিসমতে শুধু যাওয়া-আসা শুধু স্রোতে ভাসা হবে না। বাইচান্স আপনি যদি সাবমেরিনে সওয়ার হন, সে শৌচাগারটি ব্যবহার করতেই রীতিমতো একজন ইঞ্জিনায়ারকে ডাক পাঠাতে হবে! এতই নাকি জটিল তার অপারেশন। একটু ভুলচুক হলেই আপনার বাহ্যটি আর বাহ্য থাকবে না, সটান এসে মাখামাখি হবে সাবমেরিনের গায়েই। অতএব, আপনি হরাইজেন্টাল গতিতে থাকলে ভার্টিকাল বেগের কথাটা বিলক্ষণ মাথায় রাখুন।
আসুন, অন্যরকম করে করি
আসলে বলতে চাইছি, প্রকৃতির ডাক যখন, ব্যাপারটা কি মানুষের অধিকারের মধ্যেই পড়ে না? হালকা হওয়ার অধিকার। রাইট টু ফ্রি। ফ্রি-তেই তো হওয়া উচিত তবে। নিদেনপক্ষে রেটটা একটু কমুক। অন্যভাবে করুন না, মদনদা যেরকম করতে চেয়েছিলেন আরকি, বাসভাড়া না বাড়িয়ে বাসের গায়ে বিজ্ঞাপন সেঁটে দাও। অবশ্য বইমেলার মতো নয়। ‘বানান যখন ভাবায়’ শীর্ষক প্রদর্শনী। কোনওটার গায়ে লেখা --- GENTS TO LET! কোনওটার আবার --- LADIES TOY LET! এই না হলে মিলন মেলা! আমি বলছি, এসব নয়, এক্কেবারে অন্যরকম করে করুন। ধরুন, আসছে ১৯ নভেম্বর বিশ্ব শৌচাগার দিবসে টয়লেটে-টয়লেটে যদি উত্তর-আধুনিকদের ‘শক আর্ট’-এর প্রদর্শনী করা যায়। অনেকটা ২০০৮-এ নিউইয়র্কে যেমন করেছিলেন শিল্পী আন্দ্রে সেরানো। ‘শিট’ ফটোগ্রাফ এক্সিবিশন। কিংবা ১৯৬১-তে মিলানের পিয়েরো মানজোনি-র কৌটোভরা ‘আর্টিস্ট’স শিট’। ‘থার্টিগ্রাম নেট, ফ্রেশলি প্রিজার্ভড’। দেদার বিকিয়েছিল শিল্পীর সত্যি-সত্যি ক্রিয়েশন! আবার নিউজিল্যান্ডের জন কাজিনস। ১৯৮৪-তে সুরে মাতালেন এডিনবরা ফেস্টিভ্যাল। টানা সাত ঘণ্টা ধরে জল খেলেন আর লাইভ মূত্রত্যাগ করলেন সাতটি ড্রামের উপর। সা নি ধা পা মা গা রে। ভরা সন্ধ্যায় এই মূত্রশিল্পীর আশ্চর্য জলতরঙ্গ সেদিন প্রমাণ করেছিল, মানুষের ভেতরেই রয়েছে প্রকৃত হারমনি। যে শহরে জলই শোভন, জলসা এমন হতে পারে সেখানেও। এসব বাণিজ্য আরও স্ট্রেটকাট করা যায়। ১৮৭০ পর্যন্ত বিলেতে যা চলেছে। লন্ডনের স্ট্রিটকর্নার থেকে পিপে-পিপে মূত্র তোলা হত জাহাজে। তারপর জাহাজ যেত হুইটবি। ভেতরে টলটল করছে ফটকিরি তৈরির অপরিহার্য কাঁচামাল। এসব করে টু-পাইস এলে, পাবলিকের ব্লাডারে পাস্কালের সূত্রও একটু কম চাপ দিত।
আর শুধু অর্থকরী নয়, অর্থবোধকও। ১৯১৭-এ ফরাসি দাদাইস্ট মার্সেল দিউশাঁ-র আর্ট ওয়ার্ক ছিল ‘ফাউন্টেন’। স্রেফ একটা পোর্সেলেন ইউরিনালকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন স্টুডিওতে। এখন দেখার, কতটা উচ্চতায় রেখেছিলেন সেই মূত্রাধার। জলের সমোচ্চশীলতা মেনে, ঢ্যাঙা আর গেঁড়ের তো এক জায়গায় দেননি ঠাকুর! তাহলে কোন অ্যাপ্রক্সিমেশন তুলে ধরেছিল শিল্পীর চোখ? গার্নার আর গাওস্কর পাশাপাশি দাঁড়ালে কোথায় হবে গুড লেংথ? কোথাকার জল তখন কোথায় গড়াবে? এসব বিতর্কিত সময়ে, আপনি, এতক্ষণ চেপে রাখার পর, বড়জোর পুরন্দর ভাটের কবিতার ডাকে সাড়া দেবেন...
চারদিকে ছনছন
সারা গায়ে ঘিনঘিন
থই থই ছপছপ
ইউরিন! ইউরিন!
সারা গায়ে ঘিনঘিন
থই থই ছপছপ
ইউরিন! ইউরিন!
আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৭ নভেম্বর ২০১৩
No comments:
Post a Comment