20 June 2016

আ মরি বাংলা ছবি

সুস্নাত চৌধুরী



আমাদের প্রিয় টেলিফিল্ম নির্মাতা ও চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতাও, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় লিখিত ও আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বাঁচি, বাঁচাই’ উত্তর-সম্পাদকীয়ের (১২ জুন, ২০১৬) প্রেক্ষিতে এই লেখা (কৌশিকবাবুর সে লেখার লিংক রইল - http://www.anandabazar.com/editorial/the-tail-of-cinemawala-1.408838) কোনো চলচ্চিত্র-কুশলী, তাত্ত্বিক বা সমালোচক হিসেবে নয়, এ নেহাতই এক ‘দর্শক’-এর প্রতিক্রিয়া। কৌশিকবাবু তাঁর লেখায় যে গোষ্ঠীটির উদ্দেশেও বাঁচা বা বাঁচানোর ডাক তুলেছেন, এই কলমচি তাঁদেরই জনৈক প্রতিনিধি মাত্র। লেখার উদ্দেশ্যটি মহৎ, পড়লেই বোঝা যায়। যা চাইছেন, সেটি মহত্তর। কিন্তু যেভাবে চাইছেন, বা তাঁর লেখাটি যেভাবে এগিয়েছে, বহুলাংশেই তা যুক্তিহীনতায় ভরা ও অপযুক্তিতে ঠাসা বলেই বোধ হচ্ছে। সে কারণে ছবির বিষয় নিয়ে তাঁর মতোই অক্ষরের দারস্থ হয়েছি।
শুরুতেই শেষের কথায় আসি। শেষ অনুচ্ছেদে কৌশিকবাবু সাম্প্রতিক ‘শহুরে’ বাংলা ছবির দৃষ্টান্তমূলক সাফল্যের নমুনা হিসেবে কয়েকটি নাম করেছেন – ‘চাঁদের পাহাড়, বেলাশেষে, প্রাক্তন, মিশর রহস্য বা শব্দ’। যদিও, সেগুলি শুধুই ‘সফল’ ছবি, না ‘ভালো’ ছবিও বটে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এই বিতর্কে যাব না। যা মনে হচ্ছে, তিনি বলতে চেয়েছেন, ছবিগুলি যুগপৎ সফল ও ভালো। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কোন হিসেবে এই নির্ধারণ? মার্কেটিং-প্রোপাগান্ডা-পোষিত এই সুসময়ে মিডিয়া রিভিউ-এ বাজার খানিক গরম হয় বটে, কিন্তু তাকে কষ্টিপাথর হিসেবে খুব বোকা দর্শকও ধরেন বলে মনে হয় না। ‘কালোত্তীর্ণ’ বিশেষণটিও এত তাড়াতাড়ি প্রয়োগ করা যাবে না নিশ্চয়ই। সেক্ষেত্রে দু’টি অপশন থেকে যায় – এক, বেশি টাকার বাণিজ্য করা। দুই, ব্যক্তি-মানুষ হিসেবে তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানানো। যদি প্রথমটি ধরি, তাহলে এই তালিকায় অন্তত ‘শব্দ’ ছবিটির উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন জাগেই। ছবি হিসেবে ‘শব্দ’ ব্যতিক্রমী প্রয়াস, সন্দেহ নেই। কিন্তু সিনেমা হল থেকে এটি কত আয় দিয়েছিল কিংবা টেলিভিশন রাইটস বাবদই বা কত টিআরপি টেনেছিল! কাজেই, ধরে নিতে হচ্ছে, (জাতীয় পুরস্কারের কথা মাথায় রেখে) ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের কথাই জানিয়েছেন মাত্র। এগুলিকে অহেতুক যুগপৎ ‘ভালো’ ও ‘সফল’ হিসেবে ধরে নেওয়ার আর কোনো কারণ থাকতে পারে কি? তিনি যেমন তাঁর তালিকা পেশ করেছেন, একই ভাবে ব্যক্তি মানুষ হিসেবে এই বাংলার প্রতিটি চলচ্চিত্র-দর্শক তাঁদের বোধ-বুদ্ধি অনুযায়ী প্রিয় ছবির তালিকা দিতে পারেন। সেখানে ‘বস’ বা ‘পাগলু’ ঠাঁই পেলে হয়তো কৌশিকবাবু খুশি হবেন না। সম্ভবত এগুলোকেই তিনি বলেছেন, ‘বঙ্গভূমির ধানখেতে ভুট্টা’। কিন্তু উত্তর-আধুনিকতা-লালিত এই সময়ে ব্যক্তি মানুষের ‘চয়েস’-কে বাদ দিই বা কী করে! তাছাড়া সাফল্য যদি আয়ের নিরিখেও ধরি, তাহলেও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় নির্মিত কিংবা এ লেখায় নির্ণীত ছবিগুলির তুলনায় তাদের আয় ঢের ঢের বেশি। সে হিসেবের কচকচিতে ঢুকছি না। বরং লক্ষ করতে বলছি, যে তালিকা কৌশিকবাবু দিচ্ছেন, তাতে পাঁচটি ছবির মধ্যে দুটির প্রোটাগনিস্ট প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, একটির দেব। বঙ্গভূমির ধানক্ষেতে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা ফলানোর মাটি যাঁদের হাতে লেগে রয়েছে। সাম্প্রতিক যে ‘প্রাক্তন’ ছবিটি নিয়ে এত কথা, সেখানেও প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা জুটির সেই ইকুয়েশনও কিন্তু ধানখেতের ভুট্টা থেকেই উঠে আসা। সেই ইতিহাসকে এত সহজে নাকচ করে দেওয়া যায় কি?
ব্যক্তি মানুষ হিসেবে এই তালে জানিয়ে রাখছি দর্শক হিসেবে এই কলমচির পছন্দের তালিকাটি। গত দশ-পনেরো বছরে যে ক’টি মাত্র হাতে-গোনা ‘শহুরে’ বাংলা ছবি উল্লেখের দাবি রাখে বলে মনে করি, তা হল – ‘পাতালঘর’, ‘হারবার্ট’, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ও ‘জাতিস্মর’। না, পরিচালক একটির ক্ষেত্রে বাই-চান্স মিলে গেলেও, ছবিগুলির একটিও কৌশিকবাবুর লিস্টির সঙ্গে মিলছে না। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছাড়া বাকিগুলি হল ভরাতে তেমন সফলও নয় বটে। তবু, ‘ভালো’ বাংলা ছবি বাছার ক্ষেত্রে আমার এই নির্বাচনের কারণ খুব সিম্পল। এক, ছবিগুলি শেষ হয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশ বাংলা ছবিই দেখি আজকাল শুরু হয় পর্দা কাঁপিয়ে, তারপর রাশ ধরে থাকতে পরিচালক ডাহা ফেল করেন। কিন্তু, এ ছবিগুলির একটি করে যথাযথ ‘দি এন্ড’ আছে। দুই, ছবিগুলির রিপিট ভিউইং-এর মজা পেয়েছি! এই সময়কালে খুব কম বাংলা ছবিই হয়েছে, যা দু-বার দেখা যায়। এগুলি একাধিক বার দেখেও পুরোনো হয়নি। এই সরলীকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের তালিকাটা প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি হয়তো, কিন্তু কৌশিকবাবুর তালিকার কোনো ব্যাখ্যাই, মানে, কেন ‘মিশর রহস্য’ বা ‘শব্দ’-র মতো ছবি একদিন শহরের হল ভরিয়ে দেবে, তার হদিশ পাচ্ছি না। লাভ হলেও ‘প্রাক্তন’ বা ‘চাঁদের পাহাড়’ কীভাবে উল্লেখযোগ্য ছবি হল, সেটাও বুঝতে পারছি না।
কৌশিকবাবু শুরুতেই মেগা সিরিয়ালকে একহাত নিয়েছেন। ‘বুদ্ধিমান’ বাঙালি মাত্রেই ইদানিং নিয়ে থাকেন দেখি। উচিত কাজ। কৌশিকবাবু বলেছেন, ‘দেবী-দেবতা, সাপ-ব্যাঙের মধ্যযুগের গল্প’। বলেছেন, ‘শিব-দুর্গার প্রেমালাপ, জোড়া সাধকের লড়াই বা সুন্দরী মেয়ের সাপ-সাপ ভাব’। ফর্ম বা গুণগত মান নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেননি, তুলেছেন কনটেন্ট নিয়ে। তার মানে, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল কিংবা অন্নদামঙ্গলের মতো মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য নিয়েও তিনি সম্ভবত একই কথা বলবেন। বলবেন হয়তো শাক্ত পদাবলী, বৈষ্ণব পদাবলী কিংবা লক্ষ্মীর পাঁচালীর কাহিনি-কাঠামোর ক্ষেত্রেও। কারণ, তিনি তো সাফ লিখেইছেন – ‘লাভজনক বলে দেদার নির্মাণও হচ্ছে অলৌকিক বা পুরাণের গল্পবলা ধারাবাহিক’। ফালকের ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ কিংবা ‘কালিয়া মর্দন’ নিয়েও কি তাঁর একই মত? পিটার ব্রুকের মহাভারত? এই মহাভারতের চিত্রনাট্য তো আবার লিখছেন জাঁ ক্লদ কারিয়ার, যিনি কাজ করেছেন লুই বুনুয়েলের সঙ্গে! মাইকেলের যে রচনাটি থেকে কৌশিকবাবু ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ কথাটি কোট করছেন, সেই ‘শর্মিষ্ঠা’? সেটি কি পৌরাণিক নাটক নয়? কী আশ্চর্য, তবু তাঁর মতো ‘শহুরে’ পরিচালককে আজ সেখান থেকেই শব্দ ধার করতে হচ্ছে! আরও গোদা উদাহরণ দিই। ঠিক যে অবস্থানে তিনি বাংলা সিরিয়ালকে রেখেছেন, সেই নিচুতলাতেই থাকা একটি বাংলা ছবি – ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। কৌশিকবাবুর ভাষায় সম্ভবত ‘গ্যাদগ্যাদে ও চড়া দাগের’। কিন্তু তার সাফল্যকে আয়ের নিরিখে যেমন ব্যাখ্যা করা যায়, তেমনই সমাজ জীবনে প্রভাবের দিক থেকেও দেখা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে একদা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত মন্তব্যটি পাঠকের মনে থাকবে হয়তো। একটি ছবির পলিটিকাল মেটাফর হয়ে ওঠা খুব চাট্টিখানি কথা কী! শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্র হিসেবে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’-র গুরুত্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ফাদার গাঁস্ত রোবেজের মতো সমালোচকও। কিন্তু কৌশিকবাবু তো মনে করছেন, পপুলার মানেই হয়ে দাঁড়িয়েছে পিছন দিকে হাঁটা!
সম্পূর্ণ ব্যবহারিক প্রেক্ষিত থেকেও বিষয়টা দেখা যেতে পারে। তাঁর মতে যে সিরিয়ালগুলি ‘পরমার্থে... দিন-দিন রিক্ত’ করে দিচ্ছে আমাদের, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেখানে কিন্তু দিনের শেষে জয়ী হচ্ছে নারী। কেউ আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, কেউ রাজনীতির ময়দানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট নিয়ে এত এত সেমিনার-লেকচার যেখানে পৌঁছোতে ব্যর্থ হচ্ছে, সেখানে অনায়াসে এই কাহিনিগুলি স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ঠিকে ঝি, বিধবা শাশুড়ি কিংবা চারবেলার হেঁসেল-ঠেলা বউটির কাছে এটাই কি দক্ষিণ-খোলা জানলা নয়? কৌশিকবাবু ঠাকুরের ‘লোকশিক্ষে’-র প্রসঙ্গ এনেছেন। গিরিশ ঘোষের কথাও বলেছেন। কৌশিকবাবুর প্রস্তাব-মতো ‘এই দেখুন লোকশিক্ষে দিলুম’ বলে কি লোকশিক্ষা দেওয়া সম্ভব আদৌ! এখানে ‘প্রথম আলো’-র সামান্য অংশবিশেষ অর্থবহ হতে পারে। মহাভারতের জনার কাহিনি প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখছেন – ‘দর্শক-মনোরঞ্জনের সব রকম উপাদান থাকলেও গিরিশচন্দ্র এর মধ্যে নিজস্ব জীবন-দর্শনের কথাও ঢুকিয়ে দিলেন কিছু কিছু। বিদূষক চরিত্র গিরিশের খুব প্রিয়, তাঁর হাতে খেলেও ভাল। ‘জনা’ নাটকেও বিদূষকই যেন প্রধান, তার মুখে শ্লেষ-বিদ্রূপের আড়ালে জীবনের সব সার কথা উচ্চরিত।’ বাংলা সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও এই অ্যাপ্রোচ আংশিক সত্য তো বটেই। যদিও কৌশিকবাবুর মতে এসব ভয়াবহ ‘মৃত্যুর পাঁচন’। তাহলে করণীয়? হয় এদের বন্ধ করে দাও, নয়তো ভোল বদলাও। বন্ধ করার কথা নিশ্চয়ই কৌশিকবাবু বলবেন না। কারণ, সামান্য তথ্য ঘাঁটলেই তিনি জানতে পারবেন যে বাংলা ইন্ডাস্ট্রি আজ যতটা না দাঁড়িয়ে রয়েছে সিনেমায় ভর করে, তার চেয়ে ঢের বেশি মেগা সিরিয়ালে। অনেক বেশি লোকের কাজ, অনেক বেশি দিনের কাজ, অনেক বেশি আয়। শহরের স্টুডিওগুলো যে গমগম করছে, তা সিনেমার জন্য নয়, সিরিয়ালের জন্যই। তাহলে হয়তো পথ হতে পারে দ্বিতীয়টি – খোলনলচে বদলাও। এক্ষেত্রে মনে পড়ে যাচ্ছে সেই বহুশ্রুত বাক্যটি – আপনি আচরি ধর্ম...। না, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার আগে কৌশিকবাবু কি তাঁর দলের লোকেদের এ কথা বলে দেখেছেন? তাঁর সাম্প্রতিক ছবিগুলির যাঁরা প্রযোজক, তাঁরাই তো বাংলা সিরিয়ালে অন্যতম বড় চাঁই। তাঁদের অনুরোধ করেও তো দেখতে পারেন এই সিনেমাওয়ালা। কিংবা তাঁর সাম্প্রতিক ছবির যিনি প্রোটাগনিস্ট, সেই পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো মেগা সিরিয়ালে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন, এখনও তিনি একটি নন-ফিকশন শো-এর বিচারক। অনুরোধটা আগে তাঁদের কাছে করা উচিত ছিল না কি?
আসল সমস্যাটা একেবারেই অন্য জায়গায়। কৌশিকবাবুরা (হ্যাঁ, এখানে বহুবচন ব্যবহার করলাম) সম্ভবত এক স্নবারিতে ভোগেন। এটা কোনো হতাশাজনিত কারণে ঘটে কি না জানি না। নইলে ‘ছোট ছোট শহরতলি, গ্রামে কী প্রচণ্ড অহংকার ও আবেগ নিয়ে শিল্পচর্চা হচ্ছে আজও!’ বিলম্বিত বোধোদয়ের এই প্রামাণ্য বাক্যটি তিনি লিখতেন না। যদি-বা লিখতেন, তার শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন জুড়তেন না। ‘আজও’ শব্দবন্ধের ব্যবহারও আপত্তিকর। এই একই স্নবারি তাঁদের কাজ করে মূলধারার সিনেমা ও সিরিয়ালের মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও। তাঁর বক্তব্য, দুধ-ভাত না খেয়ে জাঙ্কফুড খাচ্ছে আশি শতাংশ বাঙালি। অর্থাৎ, এ রাজ্যের আশি শতাংশ মানুষের নির্বাচন ও সিদ্ধান্তকে তিনি নম্বর দিচ্ছেন না। তাহলে কি ধরে নিতে হবে তিনি সহ বাকি কুড়ি শতাংশ বাদে গোটা বঙ্গবাসী আবোদা, নির্বোধ? বেশ, তা-ও ধরে নিতে রাজি আছি। সেক্ষেত্রে তাঁরা এর প্যারালাল কিছু একটা নির্মাণ করে দেখান অন্তত। সেই হেলদি ‘দুধ-ভাত’-এ গাঁ-শহর নির্বিশেষে না-হয় এর অর্ধেক মানুষের ঢল নামান। একেবারে পরিসংখ্যান দিয়ে কিন্তু দেখিয়ে দেওয়া যায় ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ এখনও কীভাবে রেটিং এনে দেয় টেলিভিশনের পর্দায়।
এই স্নবারিই বাংলা ছবির প্রকৃত ক্ষতিটা করে দিয়েছে গত বিশ-পঁচিশ বছরে। ফেস্টিভ্যাল মুখরিত আলোকপ্রাপ্ত বাঙালি সমাজের ধূসর কোষে কেবল জমা হয়েছে ঋত্বিক, সত্যজিৎ, আর কিছুটা মৃণাল। তপন সিংহ, তরুণ মজুমদারও সেভাবে নন। অজয় কর কি পীযুষ বসুর মতো পরিচালকদের তো জায়গাই নেই। আর স্বপন সাহা, অঞ্জন চৌধুরী চাকর-বাকর ক্লাস! এই প্রি-অকুপেশনই মনে হয় বাংলা ছবির অধঃপতনের মূল কারণ। সে জন্যই মূলধারার বাংলা ছবি নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা নেই, তথ্যের ভাঁড়ার নেই। কারণ, বাজারকে ঘৃণা করে সে ‘ভালো’ হতে চেয়েছে। ভালো যে হতে পারেনি, তা কৌশিকবাবুর কথা থেকেই স্পষ্ট। বাজারকে প্রভাবিত করার ইচ্ছেটা যে সে ফিরে পেতে চাইছে, এটুকুই বোধহয় আশার কথা। কিন্তু তার জন্য দরকার সিনেমাটা ‘সিনেমা’ হয়ে ওঠা। কৌশিকবাবু বলেছেন, ‘দর্শক দু’হাতে আলিঙ্গন করুন মাতৃভাষার চলচ্চিত্রকে’। মাতৃভাষা থাকুক বটেই, কিন্তু বাংলা সিনেমায় সিনেমার ভাষাটাও যে থাকতে হবে। তা বড়পর্দার জন্য বানানো টেলিফিল্ম হয়ে গেলে আর লাভ নেই। জাঙ্কফুড ক্ষতিকারক ঠিকই, কিন্তু দুধের নাম করে পিটুলি-গোলা জল খাওয়ানোটা আরও ক্ষতিকারক নয় কি?

3 comments:

  1. খুব প্রাসঙ্গিক এবং জোরালো , ভাল লাগল, বাঙালি তথাকথিত এলিট ক্লাস তরুন মজুমদার বা তপন সিনহাকে ফিরেও দেখেনি,
    সত্যজিৎ শেষের ছবিগুলি কি পাতে দেওয়ার মত করতে পেরেছিলেন? হুজুগে বলেই আজও তথাকথিত ঝকঝকে ছবি দেখে লাফায়...
    মনের মানুষ ছবিটায় অমন বাজারী ডিজিটাল ঝকঝকানি রঙের প্রকৃতি দেখে উঠে এসে ছিলাম ! তিনি আবার srfti আলো করে থাকেন ।

    তিনি তো আবার

    ReplyDelete
  2. খুব প্রাসঙ্গিক এবং জোরালো , ভাল লাগল, বাঙালি তথাকথিত এলিট ক্লাস তরুন মজুমদার বা তপন সিনহাকে ফিরেও দেখেনি,
    সত্যজিৎ শেষের ছবিগুলি কি পাতে দেওয়ার মত করতে পেরেছিলেন? হুজুগে বলেই আজও তথাকথিত ঝকঝকে ছবি দেখে লাফায়...
    মনের মানুষ ছবিটায় অমন বাজারী ডিজিটাল ঝকঝকানি রঙের প্রকৃতি দেখে উঠে এসে ছিলাম ! তিনি আবার srfti আলো করে থাকেন ।

    তিনি তো আবার

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ!
      মনে হয়, এটাই আমাদের অধঃপতনের বড় কারণ।

      Delete